মাশরুম

mushroom

মাশরুম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি। মাশরুম হলো ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবি ছত্রাকের প্রজনন অঙ্গ। অনেকেই আমরা একে ব্যাঙের ছাতা বলে থাকি। ছত্রাকবিদরা বিশ্বে প্রায় দুই লক্ষাধিক প্রজাতির ছত্রাক চিহ্নিত করেছেন যার মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই ও বাছাই করে যে সমস্ত ছত্রাক সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সেগুলোকেই তাঁরা মাশরুম হিসেবে গণ্য করেছেন এবং সে মাশরুমকে আবার চাষাবাদের পরেও যেন খাওয়ার উপযোগী থাকে সে জন্য চাষাবাদের সর্বাধুনিক পদ্ধতি টিস্যুকালচার এর মাধ্যমে বীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন। তাই মাশরুম হচ্ছে সম্পূর্ন খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক। অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা ছত্রাক হল ব্যাঙের ছাতা যা সাধারণত খাওয়ার উপযোগী নয় এবং অধিকাংশই বিষাক্ত। সুতরাং মাশরুম এবং ব্যাঙের ছাতা এক জিনিস নয়।
এক কথায় ব্যাঙের ছাতা হলো - অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা খাওয়ার উপযোগী নয় এমন ছত্রাক যা বিষাক্ত।

আর মাশরুম হলো অসংখ্য ছত্রাক গোষ্ঠি থেকে দীর্ঘ যাচাই বাছাইকৃত টিস্যুকালচারের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা মৃতজীবি ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ (প্রজনন অঙ্গ) যা অত্যান্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধীগুণ সম্পন্ন।

মাশরুমের পুষ্টিগুণঃ
পুষ্টিগুণ বিচারে মাশরুম নিঃসন্দেহে একটি সেরা খাদ্য। কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান অতি প্রয়োজনীয় যেমন – প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সেগুলো মাশরুমে উচুঁ মাত্রায় আছে। অন্যদিকে যেসব খাদ্য উপাদানের আধিক্য আমাদেরকে জটিল মরণব্যাধীর দিকে নিয়ে যায়, যেমন – ফ্যাট মাশরুমে নেই বললেই চলে। কাঁচা মাশরুম মিক্স সবজিতে, ভর্তা, ফ্রাই, পিৎজা, স্যুপ, নুডুলস, মাছ মাংসের সংগে ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়া হয়। মাশরুমের সুন্দর্য, সুন্দর স্বাদ, মৃদু ও রুচিকর গন্ধ এবং কচকচে ভাব এর জন্য আমিষ ও নিরামিষভোজী উভয় মানুষের কাছেই অনেক জনপ্রিয়। মাশরুম শুকিয়ে গুড়ি করে রুটি বানানোর সময় আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া যায়। তাছাড়া যেসব মাশরুম রান্না করে খাওয়া যায় না সেসব মাশরুমের গুড়ো চা, দুধ এবং কফির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

মাশরুমের স্বাদঃ
মাশরুম দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি অত্যন্ত সুস্বাদু সবজি। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মুখোরোচক এই মাশরুমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে খাদ্য তালিকায় মাশরুমকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যবহৃত হতো অসাধারণ লোভনীয় স্বাদের মাশরুম। চায়না, আমেরিকা, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেন, ইটালি সহ বিভিন্ন দেশে মাশরুম চাষ করা হয় এর ব্যাপক চাহিদার জন্যই। বিশ্বব্যাপী ভোজন রসিকরা মাশরুমকে স্বর্গীয় খাবারের সাথে তুলনা করে। মাশরুম শুধু নিজেই স্বাদই খাবার নয়, মাশরুম অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মাশরুমকে পরশস্বাদু খাবারও বলা হল। স্বাদের পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন রং এর মাশরুম খাবারের সৌন্দর্যকেও বৃদ্ধি করে তুলে।

বাংলাদেশের মাশরুমের প্রকারভেদ
মৌসম ভেদে বাংলাদেশে বিভিন্ন মাশরুম চাষ করা হয়। বাংলাদেশে মূলত যেসব মাশরুম চাষ করা হয় তা হলো – ওয়েস্টার মাশরুম, মিল্কী মাশরুম, বাটন মাশরুম, স্ট্র মাশরুম, শীতাকে মাশরুম, ঋষি মাশরুম, শিমাজী মাশরুম, কান মাশরুম, পপলার মাশরুম, ইত্যাদি। সব মাশরুম রান্না করে খাওয়ার উপযোগি নয়। বিভিন্ন মাশরুমের শুকনো গুড়ো ঔষদ হিসেবে সেবন করা হয়।

পবিত্র কোরআন ও হাদীস মতে মাশরুমঃ
মাশরুম সম্পূর্ণ হালাল খাদ্য। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মাষরুমকে অত্যন্ত মর্যাদাকর খাবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‍“আল কামাতু মিনাল মান্না ওয়া মাহা সাফা আল্ আইন” অর্থাৎ “মাশরুম এক শ্রেণীর মান্না এবং এর রস চোখের জন্য ঔধষ বিশেষ”। আর মান্না সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ৫৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে “অযাল্লালনা আলাইকুমুল গামামা ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল মান্না-ওয়াস্-সালওয়া কুলুমিন তায়্যিবাতি মা রাযাক্বনাকুম; ওমা জলামুনা আলাকিন কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমূন” অর্থাৎ “আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সে সব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের জন্য দান করেছি।” সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ভাষায় মাশরুম অত্যন্ত উন্নত ও সম্মানিত খাবার হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখিত।

মাশরুমের ঔষধীগুণঃ
মাশরুমের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে যেমন অসাধারণ তেমনি মাশরুমে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঔষধীগুণ। এটি শক্তিশালী প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যে কারণে চাইনারা ‘অমরত্বের সন্ধানে’ মাশরুম খাওয়া শুরু করেন। খৃষ্টপূর্ব ৫০০ সন থেকে মানুষ মাশরুমকে সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে আসছে। প্রাচীন ফারাও সম্রাট মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করতেন। আর গ্রীকরা মনে করতেন ‘ঝুঁকিপূর্ণ লড়াইয়ের ময়দানে জয়লাভের জন্যে প্রয়োজনীয় শৌর্যবীর্য যোগাতে পারে মাশরুম’। হাদিস শরীফের সূত্র হতে জানা যায়, ‘মাশরুম হচ্ছে মান্নার নির্যাস থেকে উৎপন্ন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন খাবার’। শতবর্ষ পূর্ব থেকেই অসাধারণ খাদ্য হিসেবে মাশরুমের ব্যবহার, প্রাচীন ঔষুধ হিসেবে এর সফলতা এবং পবিত্র বস্তু হিসেবে মাশরুমকে শ্রদ্ধা, বর্তমান যুগেও মাশরুম নিয়ে গবেষণার ইন্ধন যোগাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে মাশরুমের প্রকার ভেদে বিভিন্ন বায়োক্যামিক্যাল উপাদানের উপস্থিতির কারণে লিভার, কোলেস্টেরল, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ইমুন সিস্টেম উন্নত করা ছাড়াও বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক, নিরাময়ক ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। মাশরুম অবসন্নতা দূর করার পাশাপাশি ফুসফুসের ইনফেকশনও নির্মূল করতে সক্ষম।

রূপচর্চায় মাশরুমঃ
সৌন্দর্য সচেতন মানুষের জন্য রূপচর্চায় মাশরুম একটি কার্যকরী উপাদান। সৌন্দর্য প্রিয় মানুষ চায় নিজেকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে। মূলত সৌন্দর্য চর্চার অন্যতম দিক হল সুন্দর ত্বক। তাই প্রথমে জানা প্রায়োজন আমাদের ত্বকের ধরন। ত্বক সাধারণত স্বাভাবিক, শুষ্ক ও তৈলাক্ত হয়ে থাকে। ত্বকের মসৃণতা এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে মাশরুম অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। চুলপড়া ও চুলপাকা কমাতে মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণ কপার, সেলেনিয়াম। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে চুলপড়া ও চুলপাকা বন্ধ হবে।


যোগাযোগ

ইমেইলঃ info@vegforu.com